Admission
রসায়ন - রসায়ন- প্রথম পত্র - সমযোজী বন্ধনের শ্রেণীবিভাগ

1916 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জি. এন. লুইস ( G. N. Lewis ) সর্বপ্রথম সমযোজী বন্ধন সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি প্রস্তাব করেন, মৌলের মধ্যে তড়িৎ ঋণাত্মকতা মানের পার্থক্য খুব কম বা সমান বা প্রায় সমান হলে ইলেকট্রন দান ও গ্রহণের মাধ্যমে আয়নিক বন্ধন গঠিত হয় না। তাঁর ধারণা মতে, সমান বা প্রায় সমান তড়িৎ ঋণাত্মকতা সম্পন্ন একই মৌলের দুটি পরমাণু তাদের নিজ নিজ সর্ব বহিস্থ শক্তিস্তরের সমান সংখ্যক বিজোড় ইলেকট্রন দ্বারা এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড়ের সৃষ্টি করে। উভয় পরমাণু দ্বারা সমভাবে ব্যবহৃত এ ইলেকট্রন জোড় বা জোড়গুলোর মাধ্যমে রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়। এভাবে গঠিত রাসায়নিক বন্ধনকে সমযোজী বন্ধন বলা হয়।

দুটি একই বা ভিন্ন মৌলের পরমাণু দুটি থেকে একটি করে মোট দুটি বিজোড় বা অযুগ্ম ও বিপরীত ঘূর্ণন-বিশিষ্ট ইলেকট্রন দ্বারা একটি সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। দুটি বিপরীত ঘূর্ণন বিশিষ্ট ইলেকট্রন দুটির মধ্যে সৃষ্ট তড়িৎ চুম্বকীয় আকর্ষণ বলই সমযোজী বন্ধন গঠনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখে। উদাহরণ A ও B মৌলের পরমাণু পরস্পরের মধ্যে দুটি ইলেকট্রন শেয়ার করে কীভাবে একটি A- B সমযোজী বন্ধন গঠন করে তা চিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো। A.+x B, AXB, A- B (ও X চিহ্ন-ইলেকট্রনের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়েছে।) A মৌলের পরমাণু নিউক্লিয়াস B

মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে। বিপরীতভাবে B মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াস A মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রনকে

সমানভাবে আকর্ষণ করে। উভয় নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বলের প্রভাবে ইলেকট্রন দুটির একসাথে ঘূর্ণনের ফলে নিউক্লিয়াস দুটির মধ্যে

মৌলের ইলেকট্রন ঘনত্বের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে। ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রনের ঘনত্বের এ ধরনের বৃদ্ধি ঘটিয়ে পরমাণু দুটির

মধ্যে সমযোজী বন্ধনের সৃষ্টি হয় এবং ইলেকট্রন জোড়টি A ও B পরমাণু দুটির নিউক্লিয়াসের মাঝামাঝি সুবিধাজনকভাবে অবস্থান।

করে।

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী একই মৌলের পরমাণু বা ভিন্ন মৌলের পরমাণু দুটির নিজ নিষ্ট রামতা স্তর থেকে সমানসংখ্যক বিজোড় ইলেকট্রন দ্বারা এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড় গঠিত হয়। এ ধরনের ইলেকট্রন জোড় পরমাণুষরের নিউক্লিয়াস দ্বারা সমানভাবে ব্যবহৃত হয়ে পরমাণু দুটি যে রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টি করে তাকে সমযোজী বন্ধন বলে। যেমন- H2 N2 O2, Cl2, NH, HO CH, প্রভৃতি সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত অণু ।

সমযোজী বন্ধনের প্রকারভেদ (Types of Covalent [Bond) সমযোজী বন্ধনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সমযোজী বন্ধন তিন প্রকারের হয়। যথা: (i) সমযোজী একক বন্ধন, (ii) সমযোজী দ্বি-

বন্ধন, (iii) সমযোজী ত্ৰি-বন্ধন।

(i) সমযোজী একক বন্ধন: সমযোজী বন্ধনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটি থেকে একটি করে ইলেকট্রন বন্ধনে অংশগ্রহণ করে একটি ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে। এ ইলেকট্রন জোড় সমযোজী একক বন্ধন গঠন করে এবং একে চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন--H, অণু (H – H), F, অণু (FF), Cl অণু (CI – CI), Bry অণু (Br – Br) ইত্যাদি। H; অণুর গঠন : H-পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা । H-পরমাণুতে একটি মাত্র ইলেকট্রন বর্তমান। এর ইলেকট্রন বিন্যাস,

H(1) = 1s


দুটি H পরমাণু তাদের 1s পারমাণবিক অরবিটালের অযুগা ইলেকট্রনকে পরস্পর পরস্পরের সাথে বিপরীত স্পিনে শেয়ার করে। এ দুটি অযুগ্ম ও বিপরীত ঘূর্ণন বিশিষ্ট ইলেকট্রন দ্বারা সমযোজী একক বন্ধন গঠিত হয়।

বা, HH

H.+xH - HH দুটি বিপরীত ঘূর্ণন বিশিষ্ট ইলেকট্রন দুটির মধ্যকার সৃষ্ট তড়িৎ চুম্বকীয় আকর্ষণ বলই সমযোজী একক বন্ধন গঠনে সহায়তা করে। (ii) সমযোজী দ্বিবন্ধন : যখন বন্ধনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটি থেকে দুটি করে ইলেকট্রন এনে দুটি ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে, তখন পরমাণু দুটির মধ্যে সমযোজী দ্বিবন্ধন গঠিত হয়। একে " = " চিহ্ন ছাড়া প্রকাশ করা হয়।

যেমন- O2 অণু (O = 0 ),

CH=CH, অণু, CO2 অণু (O = C = O) ইত্যাদি।

O2 অণুর গঠন : (O-পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা ৪ এবং এর ইলেকট্রন বিন্যাস O(8) = 1s 2s 2p2p/2017 11 O-পরমাণুর যোজ্যতাস্তর ২য় শক্তিস্তরে দুটি জোড় ও দুটি বিজোড় ইলেকট্রন বর্তমান। একটি O পরমাণুর যোজ্যতা স্তরে দুটি বিজোড় ইলেকট্রন অপর O পরমাণুর যোজ্যতাস্তরের দুটি বিজোড় ইলেকট্রনের সাথে বিপরীত স্পিনে শেয়ার করে O2 অণুর আণবিক গঠনের সৃষ্টি করে।

বা, O2 এভাবে দুটি O পরমাণুর চারটি বিজোড় ইলেকট্রনের বিপরীত স্পিনের শেয়ারের মাধ্যমে সমযোজী দ্বিবন্ধন গঠিত হয়। (iii) সমযোজী ত্রিবন্ধন : যখন সমযোজী বন্ধনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটি থেকে তিনটি করে ইলেকট্রন এসে তিনটি ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে, তখন পরমাণু দুটির মধ্যে সমযোজী ত্রিবন্ধন গঠিত হয়। একে " =" চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন- N2 অণু (N=N), CH=CH অণু (CC), CN আয়ন (CN) ইত্যাদি।

28

2p

N2 অণুর গঠন : N-পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা 7 এবং এর ইলেকট্রন বিন্যাস N(7) = 1s2 2s22p' in N

N-পরমাণুর যোজ্যতাস্তর ২য় শক্তিস্তরে একটি জোড় ও তিনটি বিজোড় ইলেকট্রন বর্তমান। একটি N-পরমাণুর যোজ্যতাস্তরের তিনটি বিজোড় ইলেকট্রন অপর N-পরমাণুর যোজ্যতাস্তরের তিনটি বিজোড় ইলেকট্রনের সাথে বিপরীত স্পিনে শেয়ার করে N2 অণুর আণবিক গঠনের সৃষ্টি করে ।

→ N-IN

বা, N N

বা, Na

এভাবে দুটি N-পরমাণুর ছয়টি বিজোড় ইলেকট্রনের বিপরীত স্পিনের শেয়ারের মাধ্যমে সমযোজী ত্রিবন্ধন গঠিত হয়।

পারমাণবিক অরবিটালের অধিক্রমণ ও অরবিটালের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সমযোজী বন্ধনকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।